আমেরিকান আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৮ অক্টোবরের মধ্যে ইলন মাস্ককে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের অধিগ্রহণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে হতো। যে কথা সেই কাজ! গত ২৬ অক্টোবর বুধবার ইলন মাস্ক সান ফ্রান্সিসকোয় টুইটারের সদর দফতরে হঠাৎ হাজির হন। টুইটারের দফতরে মাস্কের প্রবেশেও ছিল দারুণ চমক। হাতে বেসিন নিয়ে টুইটারের দফতরে ঢুকতে দেখা যায় মাস্ককে! এ নিয়ে তিনি একটি ভিডিও টুইটও করেন!
এরপরের দিন বৃহস্পতিবার টুইটার অধিগ্রহণের কথা বিবৃতি দিয়ে জানান বিশ্বের এই অন্যতম ধনকুবের। তিনি খুব স্পষ্টভাবে জানান যে শুধু মাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি টুইটার কেনেননি। মাস্ক টুইট করেন, ‘মানবতার স্বার্থেই টুইটার অধিগ্রহণ করেছি।’ সাথে সাথে আগামী দিনে সমস্ত পক্ষের স্বাধীন মতপ্রকাশের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রচেষ্টায় তিনি ব্রত থাকবেন সে বার্তাও জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বর্তমানের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। যেখানে নেটমাধ্যম কট্টর দক্ষিণপন্থী ও কট্টর বামপন্থীরা কয়েকটি গোষ্ঠীতে ভাগ হয়েছে। যা সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন বাড়াবে।’ তিনি এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশা ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য টুইটারের আনুষ্ঠানিক মালিক হওয়ার পর তিনি টুইটারেররের ‘স্বাধীনতা’ সম্পর্কে একটা টুইট করেছেন- যা নিয়ে পুরো দুনিয়ায় কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থবহ এই টুইটে তিনি বলেন ‘পাখি এখন মুক্ত।’ টুইটারের লোগোতে থাকা নীল পাখিটাকে ইঙ্গিত করেই যে তিনি এই কথা বলেছেন তা বোঝায় যাচ্ছে। টুইটারের নতুন মালিক হওয়ার পর এই বার্তা দিয়েই তিনি আলোচনার রসদ এনে দেন সবার মাঝে।
উল্লেখ্য দীর্ঘ ঘটন-অঘটনের পর গত ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার টুইটার অধিগ্রহণ করেছেন মাস্ক। আর তার পরেই সংস্থার সিইও পরাগ আগরওয়াল, ‘চিফ ফিনানশিয়াল অফিসার’ (সিএফও) নেড সেগালকে ছাঁটাই করেছেন তিনি। এই ঘটনাপ্রবাহে ইলনের ‘দ্য বার্ড ইজ় ফ্রিড’, অর্থাৎ, ‘পাখি এখন মুক্ত’ টুইট-বার্তা আলাদা তাৎপর্য পেয়েছে। আবার টুইটারে যে কোনও বিষয় নিয়ে যে ভাবে তর্কবিতর্ক চলে এবং ইউজাররা স্বাধীন ভাবে যেমন নিজেদের মতপ্রকাশ করে থাকেন, মাস্কের হাতে মালিকানা যাওয়ার পর তার পরিণতি কী হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে। কারণ, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মাস্ক এও লিখেছেন, ‘টুইটার কখনওই সব জায়গায় সব কিছুর জন্য মুক্ত হতে পারে না।’
লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে অতীতে টুইটারকে ব্যবহার করে বহু বার অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। অশালীন মন্তব্য করে টুইটারে সরব হতেও দেখা গিয়েছে সাধারণ ইউজার থেকে সেলেব্রেটিদেরও। ওই ধরনের ঘটনায় লাগাম টানতেই মাস্কের এই বক্তব্য কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর এরই মধ্যে উনার ‘পাখি মুক্ত’ হওয়ার যে বার্তা, তা আলাদা একটা মাত্রা পেয়ে গেলো।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ব্যয়ে টুইটার কেনার কথা ঘোষণা করেছিলেন ইলন। এরমধ্যে আবার ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ক্ষেত্রে টুইটার যথাযথ পদক্ষেপ করছে না বলে দাবি করে সেই চুক্তি থেকে সরেও আসেন একবার। তারপরে হু-হু করে সংস্থার শেয়ারের দর পড়তে থাকলে এই অবস্থায় আইনি লড়াই শুরু হয়। অনেকের মনেই সংশয় ছিলো যে শেষ পর্যন্ত মাস্ক টুইটার কিনতে পারবেন না।
No Comments
Leave a comment