প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে এক বড় নাম লজিটেক। বাংলাদেশের বাজারেও লজিটেক পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ প্রসঙ্গেই আমাদের ব্লগের জন্য একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাউথ এশিয়া ফ্রন্টিয়ার মার্কেট এট লজিটেকের হেড মিস্টার পার্থ ঘোষ। আমাদের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারকালে তিনি বাংলাদেশে লজিটেকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বর্তমান প্রযুক্তিপণ্যের বাজার এবং বাজারে আসা লজিটেকের নতুন প্রোডাক্টস লাইনআপ সম্পর্কে জানান।
রায়ান্স - আজকে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন সাউথ এশিয়া ফ্রন্টিয়ার মার্কেট এট লজিটেকের হেড মিস্টার পার্থ ঘোষ। ওয়েলকাম স্যার।
পার্থ ঘোষ - থ্যাংক ইউ।
রায়ান্স- স্যার প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য। প্রথমেই যে প্রশ্নটি আমরা করবো, করতে চাচ্ছি তা হলো - বাংলাদেশে লজিটেকের যাত্রাটা কীভাবে শুরু হলো?
পার্থ ঘোষ - প্রথমেই আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য। রায়ান্স এবং রায়ান্সের এনটায়ার ডিজিটাল টিমকে ধন্যবাদ। আমাদের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল খুব ইন্টারেস্টিং ভাবে। সেটা হচ্ছে যে, ২০০৭ সালে আমি লজিটেকের পক্ষ থেকে প্রথম ঢাকায় আসি। তখন আপনাদের গর্ভনমেন্টের ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রোজেক্টটা চলছিল, যেটা এক্সিকিউট করছিল ইউএনডিপি। সো, ইউএনডিপি আমাদের থেকে,এক্সেক্টলি মনে নেই, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ক্যামেরা পারচেজ করে। যাতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের যে ফটো তা ক্যাপচার করা যায়। তো সেটার জন্য তখনকার সময়ে আমার যে বস ছিলেন তিনি আমাকে ঢাকা শহরে পাঠিয়েছিলেন ইউএনডিপি অফিশিয়ালদের সাথে কথা বলার জন্য। সেই সুযোগে আমি বাংলাদেশের আইডিবি মার্কেটে দেখতে এসেছিলাম যে লজিটেকের ভিজিবিলিটি কিরকম, মানে লজিটেকের প্রোডাক্ট কি বাংলাদেশে ঢাকা শহরে পাওয়া যায় কি না? এবং আইডিবি তো তখন সবচেয়ে বড় মার্কেট কম্পিউটার প্রোডাক্টসের। তো আমি আইডিবিতে এসে দেখলাম লজিটেকের প্রোডাক্ট আছে তবে খুব কষ্ট করে দেখতে হয়! মানে খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন আমি কিছু পার্টনারকে জিজ্ঞেস করি যে, আপনারা লজিটেকের নাম শুনেছেন? তো ম্যাক্সিমাম পার্টনার আমাকে যেটা বলেছে সেটা হচ্ছে যে, না তারা লজিটেকের নাম শুনেনি! কিন্তু কিছু পার্টনার যেমন ধরুন ৪০ শতাংশ পার্টনার বলেছে যে হ্যাঁ আমরা লজিটেককে জানি। তো আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, লজিটেক আপনারা কেনো রাখেন না? তো প্রথম একটা তো সমস্যা ছিল যে লজিটেকের লোকাল কোন ডিস্ট্রিবিউটর ছিলো না। তো, কিছু পার্টনার তখন সিঙ্গাপুর থেকে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়ে এসে এখনকার কিছু পার্টনারকে দিতেন। তো তারা খুব অল্প সংখ্যক কিবোর্ড, মাউস বিক্রি করতো। আরেকটা যেটা কারন ছিল সেটা হচ্ছে, আপনারা নিশ্চয় জানেন যে লজিটেক হচ্ছে একটা সুইচ কোম্পানি। তো আমাদের প্রোডাক্ট প্রাইস অবিয়েসলি ডিপেন্ড অন ভ্যারিয়াস ফ্যাক্টর লাইক ডিজাইন, ইনোভেশন, কোয়ালিটি… ওকে? তো প্রাইসের একটা গ্যাপ ছিলো, সমস্যা ছিলো। তার জন্য ২০০৭ সালে লজিটেকের সেরকম কিছু আমরা দেখতে পাইনি। তারপর যথারীতি আমি ফেরত গেছি ইন্ডিয়াতে। তারপর তিন বছর পরে ২০১০ সালে আমার কোম্পানি আমাকে এই এসাইনমেন্টটা দেন যে লজিটেকের ব্র্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট করা, ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা। সো ২০১০ সালে আপনি বলতে পারেন যে বাংলাদেশে লজিটেকের অফিশিয়াল যাত্রা শুরু হয়েছে।
রায়ান্স- আচ্ছা স্যার, যেটা বললেন যে প্রথমে প্রাইসের একটা ব্যাপার ছিলো। সেকারনে গ্রাহকও সেভাবে পাচ্ছিলেন না। তো আমরা জানি যে তারপর রায়ান্সের সাথে কলাবরেশন হয় এবং তারপরেও অনেককিছু চেঞ্জ হয়ে যায়।
পার্থ ঘোষ- হ্যাঁ। ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম যে আমরা ২০১০ সালে একজন ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে আমরা লজিটেকের প্রোডাক্ট মার্কেটে অ্যাভেইলেবল করে দেই, ওকে… এবং বিভিন্ন হাউসে যাই আমাদের প্রোডাক্টটি রাখার জন্য, কনজিউমাররা যেন আমাদের প্রোডাক্ট স্টোর থেকে কিনতে পারে। তো তখন শুধু বাংলাদেশ, শুধুমাত্র বাংলাদেশ আমি বলবো না, তখন মানে ২০১০ সালের কন্টেক্সে, ভারতবর্ষ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা আশেপাশে আরও যত ইমার্জিং মার্কেট আমরা বলি আরকি, সব জায়গাতেই কাস্টমার খুব প্রাইস সেনসেটিভ, তাই না। তো সেজন্য কাস্টমার সবসময় চিন্তা করে যে কম দামের মধ্যে কি প্রোডাক্ট পাওয়া যেতে পারে। তো সেখানে কাস্টমারের কাছে কোয়ালিটিটা সবসময় বিবেচ্য হয় না বা প্রোডাক্টের ডিজাইন বলুন, বা টেকনোলোজি বলুন - এসব জিনিস বিবেচ্য হয় না। তো সেই হিসাবে আমাদের প্রোডাক্ট যেহেতু বেস্ট ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, আই মিন সুইচ প্রোডাক্ট … ইউ নো। তো মার্কেটে আসার পরেও লজিটেকের এক্সেপটেন্স খুব যে আহামরি ছিলো সেটা নয়। এবং তখন মার্কেটে যারা বড় আকারে রিটেল ব্যবসাটা চালাতেন, যেমন রায়ান্স, রায়ান্স আজকে প্রায় দুই ডিকেড দুই দশকের মত হয়ে গেছে যে রায়ান্স আজকে রিটেল বিজনেসে বা আইটি বিজনেসে আছে, ঠিক আছে? তো, জুয়েল ভাই তখন আমাদের প্রোডাক্ট কিন্তু সেইভাবে রাখতেন না। মানে রাখলেও খুব অল্প সংখ্যক রাখতেন। তো, আমি একদিন জুয়েল ভাইয়ের সাথে দেখা করি। আমার মনে নেই ঠিক সালটা, যত সম্ভব এটা ২০১১ কি ১২ হবে। আমি জুয়েল ভাইয়ের সাথে দেখা করি। আমি বলি যে আপনি আমাকে একটু সময় দেন। আমি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলবো, ঠিক আছে। তো উনি আমাকে সময় দিয়েছিলেন। আমিও উনার অফিসে যাই এবং আমি লজিটেককে উনার সামনে তুলে ধরি। আমি বলি যে আপনি প্রথম লজিটেক… মানে, আমাদের প্রত্যেকের একটা পরিচয় আছে, আমরা কারও কাছে গেলে বলি আমার নাম, আমার দেশ বা আমার গ্রাম, রাইট? তো তেমনি লজিটেকের একটি পরিচয় আছে। সেই পরিচয়টা একচুয়েলি বাংলাদেশে ছিলো না। জুয়েল ভাইয়েরও স্পষ্ট ধারনা ছিলো না, উনি জানতেন যে লজিটেক ভালো কোম্পানি। তো সেই আলোচনাটা আমরা জুয়েল ভাইয়ের সাথে করি এবং আমরা জুয়েল ভাইকে বলি যে আপনি হচ্ছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরিবেশক আইটি প্রোডাক্টের এবং আপনার কাছে কাস্টমাররা আসে সবচেয়ে ভালো প্রোডাক্টটা পাওয়ার জন্য। তো আপনি যদি লজিটেকের প্রোডাক্ট রাখেন তো মনে হয় সেটা আপনার জন্য ভালো হবে এবং আমার জন্য তো অবশ্যই ভালো হবে। তো উনি কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই কিন্তু রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমি উনাকে বলেছি দেখুন আপনার এতোগুলো স্টোর আছে, আমরা এতোগুলো স্টোর না রেখে আমরা প্রথমে একটা পরীক্ষা করি। ঠিক আছে? আপনি আমাকে একমাসের একটা সময় দিন এবং আপনার যেটা সবথেকে বড় স্টোর তখন মানে আইডিবি, সেই স্টোরে আমি কিছু আমার প্রোডাক্ট ডিস্ট্রিবিউটর থেকে নিয়ে রাখুন। একমাস আপনি রাখুন, দেখুন কি হয়। তো খুব ইন্টারেস্টিং যে ঐ একমাস সময় নিয়ে আমি বেশ কিছু সংখ্যক প্রোডাক্ট আইডিবিতে রেখেছিলাম, সেই যাত্রা বাড়তে বাড়তে বাড়তে, মানে কি বলবো, একটা চারাগাছ থেকে বিশাল বড় একটা গাছের আকার নিয়েছে। আজকে রায়ান্সের কুড়িটা স্টোর আছে এক্রোশ বাংলাদেশে এবং প্রত্যেকটা স্টোরে আমি লজিটেকের প্রোডাক্ট দিয়েছি। ইন ফ্যাক্ট আমি বরিশাল গিয়েছিলাম, খুলনা গিয়েছিলাম… ওকে… আমি বরিশালের স্টোরে গেছিলাম। আমি দেখলাম যে লজিটেকের কিবোর্ড, মাউস তো আছেই আছে তার সাথে আমাদের যে হাই এন্ড স্পিকার আছে সেই স্পিকারও বরিশালের মত একটা ছোট্ট শহরেও রায়ান্স রেখেছে। সো এটা খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক। এটা একটা ছোট্ট সাক্ষাৎকার দিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ একটা বিশাল বড় জায়গায় পৌঁছেছে এবং সত্যিই ধন্যবাদ জুয়েল ভাইকে এবং রায়ান্স টিমকে। আর তার জন্যই হয়ত আপনি আজ আমাকে এখানে ডেকেছেন।
রায়ান্স - স্যার, আমরা জানি যে আমাদের এমডি স্যারের সঙ্গে আপনার হৃদ্যতার একটা সম্পর্ক আছে। তো সেই সম্পর্কে শুরুটা কিভাবে হলো?
পার্থ ঘোষ - ঐ সম্পর্কের শুরুটা হয় ঐভাবেই। মানে আমার ঐ প্রোডাক্টকে রায়ান্সে রাখার জন্য ঐভাবেই সম্পর্কটা আগায়। দেখুন, জুয়েল ভাই, আমি বাংলাদেশে প্রতিটি শহরে গেছি, ২০-২৫ টা শহরে গেছি, শতশত পার্টনারের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু জুয়েল ভাই একচুয়েলি জুয়েল ভাই! মানে উনি প্রচণ্ড নম্র, খুব ধীর-স্থির প্রকৃতির মানুষ এবং খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনেন। তো উনার সাথে সম্পর্ক ভালো হওয়ার সুযোগটা আমার এভাবে হয়েছিল যে, আমি যে কথাগুলো বলেছিলাম উনাকে, উনার মনে হয়েছিল যে হ্যাঁ এই কথাগুলোর একটা ভ্যালু আছে। তো সেই থেকেই আমাদের একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। তো পরিবর্তীতে আমি জুয়েল ভাইয়ের সাথে অনেকবার দেখা সাক্ষাৎ করেছি এবং শুধু জুয়েল ভাইয়ের লজিটেকের উপর যে একটা কন্ট্রিবিউশন শুধু তাই নয়, পুরো আইটি ইন্ডাস্ট্রির উপরে জুয়েল ভাইয়ের একটা বিরাট বড় অবদান আছে। স্পেশালি প্যানডেমিকের সময় যখন সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে যায় তখন রায়ান্স কিন্তু কনজিউমারকে প্রোডাক্ট বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। তাই আই মাস্ট থ্যাংক জুয়েল ভাই এন্ড রায়ান্সের টিমকে যে শুধুমাত্র এটা একটা বিজনেস নয় এটা একটা সার্ভিস যা আমরা কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, যাতে তারা তাদের প্যানডেমিকের সময় যখন স্কুল, কলেজ, ফ্যাক্টরিজ, অফিস সমস্ত কিছু বন্ধ তারা যাতে তাদের পড়াশোনা, কাজকর্ম কন্টিনিউ রাখতে পারে জারি রাখতে পারে।
রায়ান্স - স্যার শুরুর সময়ের প্রেক্ষাপট এবং তারপর এতো বছর পর, কি কি পরিবর্তন আপনি দেখলেন টেক মার্কেটে?
পার্থ ঘোষ - দেখুন টেক মার্কেট মানে আমি যদি বলি যে, আমার মনে হয় ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। ঠিক আছে, তো আমার যথেষ্ট হৃদ্যতা আছে জব্বর সাহেবের সাথে, পলক সাহেবের সাথে। তো এখন আপনি যেকোন সেক্টরে যান ওকে সেটা কৃষি হতে পারে, সেটা যেকোন ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি যেটা বাংলাদেশের সব থেকে বড় ইন্ডাস্ট্রি সব থেকে বেশি ফরেক্স ওখান থেকে আমাদের বাংলাদেশে আসে। তো, অ্যা এবং শিক্ষা , স্কুল, এডুকেশন ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারেন বা যেকোন ইন্ডাস্ট্রিতে … আজকে প্যানডেমিকের পরে সবাই একটা জিনিস আমরা পৃথিবীতে বুঝতে পেরেছি সবাই যে … অ্যা … সমস্ত কিছু যখন বন্ধ হয়ে যাবে, সমস্ত রাস্তা যখন বন্ধ হয়ে যাবে, স্কুল, কলেজ, অফিস, বাস, ট্রাম, ফ্যাক্টরি … আমাদের লাইফ তো চলতে থাকবে, থেমে থাকতে পারে না। সেই লাইফটাকে যদি কন্টিনিউ করতে হয় তাহলে কিন্তু আমাদের আইটির সাহায্য দরকার। ওকে, যাতে করে আমরা বাড়ির মধ্যে থেকেও আমরা বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রেখে নিজেদের কাজ, কর্ম, পড়াশোনা জারি রাখতে পারি। তো আইটি আপনি যেখানেই যান … কৃষিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, বাংলাদেশ ফর্থ লারজেস্ট রাইস প্রডিউসার এবং বাংলাদেশ আমার মনে হয় লারজেস্ট সুইট ওয়াটার মাছ প্রডিউসার। তো সেখানেও কিন্তু অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। অনেক আপনাদের এখানে আমি দেখেছি যে এডুকেটেড ইয়াং জেনারেশন তারা নিজেদের গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিশ্র ভেজিটেবল, ফলের বাগান তৈরি করেছে। ঠিক আছে, আজকে বাংলাদেশে ড্রাগন ফুড বা আপনার যে বিদেশী আঙ্গুর বা মাল্টা এর বিরাট বড় বিজনেসে পরিণত হয়েছে। আর আমি খেয়াল করে দেখেছি এই যারা এই কৃষি ক্ষেত্রে আছে, বাগান করছে, তারা কিন্তু প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে। তারা বিভিন্ন দেশে কীভাবে চাষ করলে ফলটা ভালো পাওয়া যায় বা তারা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কৃষি বিজ্ঞানীদের সাথে ঢাকার সাহায্য নিচ্ছে বা অন্যান্য এক্সপার্টদের সাহায্য নিচ্ছে। তো আপনি দেখতে পারছেন যে কৃষি ক্ষেত্রেও কীভাবে আইটি সাহায্য করছে এবং জিনিসটাকে গ্রো করতে … সো আমি কৃষি বললাম… আপনি এবার ভাবুন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশে সবথেকে বেশি ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট হয় এবং সব থেকে বেশি ফরেন রেভিনিউ আসে। নাও যখন প্যানডেমিক ছিলো তখন কি আপনাদের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি কি সব বন্ধ ছিলো দু’বছর? ছিলো না, ফ্যাক্টরি কাজ করে। এখন আপনারা আপনাদের গার্মেন্টসগুলো কাপড় কাদের জন্য বানান? বানান ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলোর জন্য, আমেরিকার জন্য বা ইন্ডিয়ার জন্য। তো তারা কীভাবে কাজ করেছে? আমি জানি তারা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে তারা যারা বায়ার আছে ইউরোপের, আমেরিকার, ইন্ডিয়ার তাদের সাথে কলাবরেশন করে ডিজাইন ডেভেলপ করা বলুন, টেক্সচার বলুন, ম্যাটেরিয়াল বলুন সেগুলোকে নিয়ে … কাজটা কিন্তু থেমে থাকেনি। আগে যেটা হতো ইউরোপিয়ান কান্ট্রি থেকে আগে এখানে ওরা আসতো বা ইন্ডিয়া থেকে এখানে লোক আসতেন, আমেরিকা থেকে আসতেন, এখানে বসে আলোচনা করে কাজ করতেন। সেই কাজটাই কিন্তু ওরা ভার্চুয়ালি করেছেন, কিন্তু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয় নি। সো প্রযুক্তি ছাড়া আজকের দিনে কোন অগ্রগতি সম্ভবই না।
রায়ান্স - স্যার আপনি উল্লেখ করেছেন এবং আমরাও জানি যে লজিটেক সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তো সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যে কলেবর এবং কার্যক্রম আছে সেটা সম্পর্কে আমাদের দর্শকদেরও অনেক আগ্রহ আছে। তো এ সম্পর্কে যদি আপনি সংক্ষেপে কিছু বলেন।
পার্থ ঘোষ- সো, একচুয়েলি যে আমরা সত্যিই খুব গর্বিত। মানে আমি তো একজন এমপ্লয়ি হিসেবে আমি সবসময় গর্ব বোধ করি যে শুধু আমি নয় আমার ফ্যামেলি, আমার ফ্রেন্ডস বা আমার কলিগ তারা খুব গর্ব বোধ করে যে আমরা একটা সুইচ কোম্পানিতে চাকরি করি। এখন কথাটা হচ্ছে কেন? সেটা হচ্ছে যে সুইস/ সুইজারল্যান্ডের আপনি যদি দেখেন আমাদের যে তিনটি জিনিসের উপর আমরা ফোকাসড, ওকে এবং তার জন্য আমরা বিশ্বের এক নম্বর। ১৯৮১ আমাদের কোম্পানি এস্টাবলিশ হয়েছিল সুইজারল্যান্ডে, আজকে ২০২২, ফোরটি ওয়ান ইয়ার্স আমরা পেরিয়ে এসেছি। চার দশক! নাম্বার ওয়ান ছিলাম, আজও নাম্বার ওয়ান আছি আমাদের ক্যাটাগরিতে। এটা সম্ভব হয়েছে কারন হয়েছে আমাদের কোম্পানি যেটা বিশ্বাস করে সেটা হচ্ছে তিনটি জিনিস। প্রথম কথা হচ্ছে টেকনোলজি ইনভেনশন। দু নম্বর হচ্ছে ডিজাইন, গুড ডিজাইন… ওকে। থার্ড হচ্ছে কোয়ালিটি। আর আপনি মানে আপনি এই তিনটে জিনিস আপনি লজিটেক থেকে চোখ বন্ধ করে আশা করতে পারেন। এন্ড বিইং অ্যা সুইস কোম্পানি এই তিনটি জিনিসের উপর আমরা প্রচণ্ড কন্সিস্টেন্ট। আজকে পৃথিবীর প্রায় দশ থেকে বারোটা দেশে আমাদের উদ্ভাবনী সেন্টার আছে, আরএনডি সেন্টার আছে। যেমন লসেন সিটি ইন সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইন ইউএস, ইন তাইওয়ান, ইন চায়না এন্ড ইভেন ইন ইন্ডিয়া। যেখানে আমরা কন্টিনিউয়াসলি আমরা টেকনোলজি ইনভেনশন, ইন্ট্রিগেশন, ডিজাইনিং এর উপর কাজ করছি।
রায়ান্স - স্যার এবার জানতে চাইবো যে গ্লোবাল মার্কেটে লজিটেক কাদেরকে কম্পিটেটর মনে করে আর বাংলাদেশেও আপনারা কাদেরকে কম্পিটিটর হিসেবে দেখছেন?
পার্থ ঘোষ - এখন, সি, দেখুন একটু আগে আমি যেটা বললাম যে আমরা হচ্ছি এই ইন্ডাস্ট্রির লিডার। মাউস, কিবোর্ড, ওয়েবক্যাম আরও অনেক এক্সেসরিজ আছে এবং আমরা গ্লোবালি নাম্বার ওয়ান ইন টার্মস অফ ইউনিট অর সাম ক্যাটাগরি এন টার্মস অফ রেভেনিউ এজ ওয়েল। তো আমরা সবসময় ফোকাস করি যে কীভাবে আমরা আরও ভালো টেকনোলজি উদ্ভাবন করতে পারবো বা সেটাকে ইন্ট্রিগেট করতে পারবো। আরও কত ভালো ডিজাইন তৈরি করতে পারবো যাতে সেটা আমাদের যারা কনজিউমার আছে তাদেরকে হেল্প করবে। স্লিমলেসলি এক্সপ্লোর দ্যা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড। আমরা এটার উপর ফোকাস করি। দেখুন প্রত্যেক বিজনেসে, প্রত্যেক ব্র্যান্ডে, প্রত্যেক প্রোডাক্টের কম্পিটেটর আছে, কম্পিটিশন আছে। আমাদেরও কম্পিটিশন আছে। কিন্তু আমরা কম্পিটিশন নিয়ে ভেবে আমাদের সময় নষ্ট করতে চাই না। আমরা চাই, আমরা যেটা করি সেটা হচ্ছে একটা ভালো প্রোডাক্ট তৈরি করা কাস্টমারের জন্য, আমাদের কনজিউমারের জন্য। এটা সে ব্যবহার করে আরও চার পাঁচজন দশজনকে বলবে যে হ্যাঁ এটা একটা ভালো প্রোডাক্ট। আমরা সেটার উপরে ফোকাস করি।
রায়ান্স - আচ্ছা স্যার আমরা গত দু বছরে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি প্যানডেমিকের সময়ে। তো এর পরবর্তী এখন টেক মার্কেটের অবস্থা এখন কেমন মনে হচ্ছে, মানে আপনি কীভাবে দেখছেন এখনকার সিচুয়েশন?
পার্থ ঘোষ - আমার মনে হয় এই প্রশ্নটার উত্তর আমি একটু আগে একটু বলেছি। যেটা হচ্ছে যে টেকনোলজি ছাড়া কোন অগ্রগতি সম্ভব নয়। আপনি দেশ বলুন, আপনি ব্যবসা বলুন, আপনি শিক্ষা বলুন, আপনি আপনার পারসোনাল লাইফ বলুন… আপনি একটা কথা ভেবে দেখুন, আপনি হয়ত, আপনি একটা দিন না খেয়ে আপনি বাঁচতে পারেন। শুধু জল খেয়ে, রমজান মাসে যেটা হয়। মানে মিলিয়ন্স অফ পিপল এখানে ফাস্টিং করে ফর অ্যা মান্থ। রাইট? কিন্তু এটা কি সম্ভব যে আপনি মোবাইল ছাড়া একটা দিন সার্ভাইভ করতে পারবেন? সম্ভব না। তো আপনি যেখানেই যান, আপনার সবসময় মোবাইলটা সঙ্গে যাচ্ছে। আপনি হয়ত কোন জিনিস নিতে ভুললেও ভুলে যেতে পারেন কিন্তু মোবাইল নিতে ভুলবেন না, চার্জার নিতে ভুলবেন না। কেনো? কারন আজকে ফোন বা নোটবুক- এটাই হচ্ছে আপনার বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম। আপনি খবর দেখছেন, আপনি সিনেমা দেখছেন, আপনি ব্যাংকের কাজ করছেন, আপনি ট্রেনের টিকেট বুক করছেন বা আপনি মেইল দেখছেন, মেইল লিখছেন বা আপনি ফুটবলের নিউজ দেখছেন, স্পোর্টস … সমস্ত কিছু। এবং এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকে এক্সপ্লোর করার জন্য লজিটেকের প্রোডাক্ট কনজিউমারের এক নম্বর চয়েজ।
রায়ান্স - তা তো অবশ্যই। আমাদের আসলে প্রযুক্তি নির্ভরতাটা বেড়েছে। তো ওটা নিয়েই আমার পরবর্তী প্রশ্ন। আমাদের এখনকার সময়টা কিন্তু অনেক বদলে যাচ্ছে। আমাদের প্রযুক্তি পণ্যের যেমন ব্যবহার বেড়েছে তেমনি চাহিদাও বাড়ছে। তো এই প্রযুক্তি নির্ভরতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন আপনি? আর বাংলাদেশে পরবর্তী যে টেক নির্ভর দুনিয়াটা আসছে তার জন্য বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত আছে বলে মনে করেন?
পার্থ ঘোষ - আপনাকে আমি কিছু স্ট্যাটিসটিক বলি আর কি যেটা আমি নিজে স্টাডি করেছি বিভিন্ন সোর্স থেকে। সেটা হচ্ছে দেখুন বাংলাদেশে আজকে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পপুলেশন। এই ১৭০ মিলিয়ন পপুলেশনের ৭০ শতাংশ পিপলের বয়স ৩৫ এর নিচে। তো মানে এই দেশে ইয়াং পপুলেশন ভেরি হাই। ওকে, নাও আরেকটা পরিসংখ্যান বলি যে বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট পেনিট্রেশন এখন ওভার ১০০ মিলিয়ন। মানে ১০০ মিলিয়ন লোকের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। এবং মোর অর লেস সবাই এরা স্মার্ট ফোন ইউজ করছে। রাইট? তো আপনি যেটা বলছেন মানে স্টার্ট আপের কথা আপনি বলছেন, তো বাংলাদেশে এখন এই যে ইয়াং পপুলেশন এরা কিন্তু নতুন কিছু করার জন্য তৈরি হয়ে আছে এবং এরাই কিন্তু আমাদের যেকোন দেশের শক্তি এবং ফিউচার। সেখানে আমার মনে হয় যে বাংলাদেশে আরও অনেক বিদেশী পুঁজি দরকার। যাতে এই স্টার্ট আপগুলোকে বুস্ট করতে পারবে। তাদের যে উদ্ভাবনী শক্তিটাকে আরও বেশি করে এক্সপ্লোর করতে পারবে। আমার মনে হয় সেটা একটা দিক। অলরেডি কাজ শুরু হয়েছে। লাস্ট পাঁচ বছরে আমি বিশাল বড় একটা পরিবর্তন দেখছি বাংলাদেশে। সেখানে আমি দেখছি অনেক বিদেশি কোম্পানি পুঁজি নিয়ে আসছে বাংলাদেশে, বিভিন্ন স্টার্ট আপে ইনভেস্ট করছে। সো আমরা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, হুইচ ইজ অ্যা গুড ট্রানজিশন পিরিয়ড।
রায়ান্স - স্যার এবার আমি জানতে চাইবো যে লজিটেক এ বছর কি কি নতুন এক্টিভিটি নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে এবং আমাদের দর্শকরা নিশ্চয় জানতে চাইবে কি কি প্রোডাক্ট নতুন আসতে যাচ্ছে এ বছর?
পার্থ ঘোষ - তো যেটা কথা হচ্ছে আমরা প্রত্যেকটা কোয়ার্টারে (তিনমাসে) দু থেকে তিনবার আমরা নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ করি বা মার্কেটে নিয়ে আসি। কিন্তু ফিউচারে কি প্রোডাক্ট আসবে তা আমি বলতে পারবো না। এটা কোম্পানির একটা সিক্রেট ব্যাপার। তো আমরা যদি এখন বলে দেই তো ঐ এক্সাইটমেন্টটা আর থাকবে না। তো এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। আমি আগেও বলেছি যে আমাদের ১২ টার উপর উদ্ভাবনী কেন্দ্র রয়েছে বিভিন্ন দেশে। আমরা প্রতিনিয়তই ইনভেস্ট করছি নতুন টেকনোলজি, নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসার জন্য, নতুন ডিজাইন নিয়ে আসার জন্য। তো বাংলাদেশেও আমরা নিয়ে আসছি নতুন প্রোডাক্ট। আমরা গত ৩/৪ মাসে ৩টা ৪ টা নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছি। খুব ভালো ভালো প্রোডাক্ট। যেমন একটা G435 গেমিং হেডসেট। এটা একটা হেডসেট যা রিসাইকেল প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এটা খুবই পাতলা, হেডসেটটা আপনি ব্লুটুথ দিয়েও কানেক্ট করতে পারবেন আবার রিসিভার দিয়েও কানেক্ট করতে পারবেন। এবং এই হেডসেট আপনি গেম খেলা ছাড়াও এন্টারটেইনমেন্টের কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা একটা নতুন মাউস বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি সেটার নাম হচ্ছে প্যাবেল M350. এটা আমাদের প্রচণ্ড সফল একটা মাউস আমাদের পুরো দুনিয়া জুড়েই এবং আমরা খুব অবাক যে ঐ মাউসটা বাংলাদেশে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট সেলিং মাউস হয়ে গেছে অলরেডী। এই মাউসটি কিন্তু, আপনি কম্পিটিশনের কথা বলছেন, এই মাউসটার কিন্তু কোন কম্পিটিশন নেই। কারন এই মাউসের যে টেকনোলজি, সেট, সাইজ এন্ড কালার সেটার সাথে কোথাও কোন কম্পিটিশন নেই। খুব অবাক করা কান্ড যে এই প্রোডাক্টগুলো বাংলাদেশে যারা ইয়াং জেনারেশন আছে তারা খুব পছন্দ করছে। দে আর মেকিং দিস প্রোডাক্টস এজ অ্যা হায়েস্ট সেলিং প্রোডাক্টস।
রায়ান্স - সবশেষে স্যার আবারও আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদেরকে এই সময়টা দেওয়ার জন্য। আশা করি আমাদের দর্শকরা এই আলাপচারিতার মধ্যদিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। তো আমাদের দর্শক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান?
পার্থ ঘোষ - আমি একটাই কথা সবাইকে বলতে চাই সেটা হচ্ছে যে লজিটেক হচ্ছে সুইস কোম্পানি এবং আমরা শুধুমাত্র যে প্রোডাক্ট তৈরি করি, ডিজাইন করি তা নয়। আমরা পরিবেশ নিয়েও অনেক চিন্তা করি এবং পরিবেশকে কীভাবে উই ক্যান মেক আওয়ার ওয়ার্ল্ড মোর গ্রিনারি, কীভাবে উই ক্যান মেক আওয়ার ওয়ার্ল্ড মোর লিভেবল ফর দ্যা জেনারেশন টু কাম - আমরা তার উপরেও কাজ করছি। তো প্রোডাক্ট তো অবশ্যই আমাদের ভালো। সাথে আমাদের প্রোডাক্ট যদি কাস্টমাররা ব্যবহার করে তাহলে তারা পরিবেশ ক্লিক করতে বা গ্রিন করতে সাহায্য করে। আমি এটাও বলবো যে রায়ান্স আজ যেভাবে এই কম্পিউটার ও কম্পিউটার কম্পোনেক্ট ও সার্ভিস বাংলাদেশের জনগনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এটাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, রায়ান্সের জুয়েল ভাইকে এবং রায়ান্সের পুরো টিমকে। আমি আশা করবো যে রায়ান্স এটাকে দু দশক পেরিয়ে আসছে, আরও অনেক দশক রায়ান্স এগিয়ে চলুক এবং আমরা যেন এর সঙ্গী হতে পারি।
রায়ান্স - ধন্যবাদ স্যার।
To Watch The Whole Interview on YouTube CLICK HERE
No Comments
Leave a comment