বাংলাদেশে প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে নতুন উদোমে কাজ শুরু করেছে হুয়াওয়ে। আর এ উপলক্ষ্যে আমাদের ব্লগের জন্য একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হুয়াওয়ে বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মিস্টার ক্রিস। আমাদের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারকালে তিনি হুয়াওয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বর্তমান প্রযুক্তিপণ্যের বাজার এবং হুয়াওয়ের আসন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কে তার বক্তব্য রাখেন।
রায়ান্সঃ প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুনভাবে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের বাজারে ফিরে এসেছে। তো এ ব্যাপারটি নিয়ে আপনার অনুভূতি কি?
মিস্টার ক্রিসঃ আসলে বাংলাদেশে এটা আমার প্রথমবারের মত আসা। সত্যিকার অর্থে খুব ভালো লাগছে। বিশেষকরে যখন দেখছি আমাদের সকল কনজিউমার ও পার্টনাররা আমাদেরকে দারুনভাবে গ্রহণ করেছে। একটা হাই এন্ড প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হিসেবে সবারই প্রত্যাশা হুয়াওয়ে নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসবে বাজারে। আর এই ব্যাপারটা দারুনভাবে আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে আমাকে।
রায়ান্সঃ নতুনভাবে এই শুরুর সময়ে কি কি পরিকল্পনা নিয়ে হুয়াওয়ে আমাদের সামনে আসতে যাচ্ছে?
মিস্টার ক্রিসঃ এই বছর আমরা আইটি প্রোডাক্টের উপর মূল ফোকাস রাখছি। নতুন ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি আরও প্রোডাক্ট আনতে যাচ্ছি আমরা। এছাড়া এ বছর না হলেও আগামী বছর আমরা নতুন স্মার্ট ফোন নিয়ে আসবো।
রায়ান্সঃ যদিও হুয়াওয়ে আমাদের কাছে মোবাইল পণ্য প্রস্তুতকারক ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশি পরিচিত। তবে এবার কি টেকনোলোজি ফিল্ডে অন্যান্য প্রোডাক্ট নিয়ে কি কাজ করতে আগ্রহী হুয়াওয়ে?
মিস্টার ক্রিসঃ হ্যাঁ অবশ্যই। হুয়াওয়ের পরিকল্পনা শুধুমাত্র মোবাইল ডিভাইসের উপর সীমাবদ্ধ না। একটা কথা মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু কোন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড নই। আমরা সবধরণের আইটি প্রোডাক্ট নিয়েই কাজ করছি। একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। এর মধ্যে যেমন হার্ডওয়্যার ইকোসিস্টেম আছে তেমনি সফটওয়্যার ইকোসিস্টেমও আছে। এছাড়া আমরা আমাদের একটি key concept নিয়ে কাজ করছি। যাকে বলছি আমরা Super Device. এটা এমন একটি ফাংশন যা আপনার সব প্রোডাক্টকে একসাথে কানেক্ট করবে। আর এরফলে গ্রাহক ভালো সেবা পাবে। যেমন আপনি আপনার স্মার্ট ফোনকে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন। ল্যাপটপে হার্ডওয়্যার এটা সহজেই গ্রহণ করবে। আর এটিই আমাদের হার্ডওয়্যার ইকোসিস্টেম যেখানে আপনি হরেকরকম ফাংশন পেয়ে যাবেন। আর সফটওয়্যার ইকোসিস্টেমে রয়েছে আমাদের নিজস্ব বেশকিছু অ্যাপ। আপনি আমাদের হুয়াওয়ে অ্যাপ গ্যালারি থেকে এই অ্যাপগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এছাড়া আমাদের হুয়াওয়ে আফটার সার্ভিস সাপোর্ট রয়েছে, হুয়াওয়ে হাউস নামে একটি অ্যাপ রয়েছে যার মাধ্যমে হাউজ ম্যানেজমেন্টের কাজ করা সম্ভব হবে। সুতরাং আমরা শুধুমাত্র স্মার্টফোনে না সবক্ষেত্রেই আমাদের কার্যক্রম রেখেছি।
রায়ান্সঃ রায়ান্স কম্পিউটার্স সম্পর্কে হুয়াওয়ের মূল্যায়ন কি? বাংলাদেশের বাজারে রায়ান্সের অবস্থান ও কর্মযজ্ঞ নিয়ে আপনাদের মতামত ও মন্তব্য কি?
মিস্টার ক্রিসঃ এখানে আসার আগেই আমি রায়ান্স সম্পর্কে জেনেছি। আমার মতে বাংলাদেশের আইটি বাজারে রায়ান্স খুব শক্ত একটা অবস্থান নিয়ে আছে। হুয়াওয়ে এখানে আসার আগেই আমাদের অনেক পার্টনার রায়ান্স সম্পর্কে জানায়। আমার মতে শুধু রিটেইল বিজনেসে নয়, ইকমার্সেও দারুন একটা অবস্থান আছে রায়ান্সের।
রায়ান্সঃ হুয়াওয়ে যদি রায়ান্সের সাথে কাজ করতে চায় তবে কি কি ক্ষেত্রে কাজ করা সম্ভব? এক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
মিস্টার ক্রিসঃ একসাথে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছু আর নেই। হুয়াওয়ে বাংলাদেশ আমাদের এই যাত্রাপথে রায়ান্সকে অবশ্যই চায়। রায়ান্সের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ল্যাপটপ, মনিটর এবং প্রিন্টার এই তিনটি প্রোডাক্টের উপর গুরুত্ব বেশি দিতে চাই। কারন এই তিনটি প্রোডাক্টই বাজারে খুবই কমপেটিটিভ। আর রায়ান্সের রিটেইল চ্যানেল অনলাইন অফলাইন দুইভাবেই খুবই শক্ত। আমরা এই জায়গাটাতেই একসাথে কাজ করতে চাই।
রায়ান্সঃ প্যানডেমিক সিচুয়েশনে ২ বছর চলে যাওয়ার পর এখন পুরো বিশ্বজুড়ে টেক মার্কেট কী ধরণের অবস্থায় আছে বলে মনে করেন? মাঝখানে টেক প্রোডাক্টসমূহের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল, এখন কি পরিস্থিতি আছে? টেক প্রোডাক্টদের দাম কি কমবে? এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
মিস্টার ক্রিসঃ প্রথমেই বলে রাখি যে এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। আমার অভিজ্ঞতা বলে প্রোডাক্টের দাম আপাতত কমছে না। এর পিছনে কারনও আছে অনেক। প্যানডেমিক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আরও বেশকিছু কারনে প্রোডাক্ট প্রাইসের উপর কোন বদল হবে বলে মনে হচ্ছে না।
রায়ান্সঃ আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, হুয়াওয়ে ল্যাপটপ ও ল্যাপটপ সামগ্রী নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বর্তমান সময়ে বাজারে ল্যাপটপ নিয়ে আসতে হুয়াওয়ের প্রস্তুতি কেমন? বিশ্ব বাজারের সাথে সাথে বাংলাদেশের টেক মার্কেটে ল্যাপটপ পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কি কি পরিকল্পনা নিচ্ছে হুয়াওয়ে?
মিস্টার ক্রিসঃ আমরা এ বছরের শুরু থেকে এর উপর বেশকিছু রিসার্চ করেছি। বিশেষকরে আমাদের পার্টনার, ডিলার এবং বিভিন্ন শপে আমাদের প্রতিনিধিরা গিয়ে তথ্য নিয়েছে বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে। সুতরাং আমরা বাজারের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছি এবং আমাদের প্রোডাক্ট নিয়েও আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী।
রায়ান্সঃ হুয়াওয়ে থেকে তাহলে আমরা কি কি নতুন ল্যাপটপ পেতে যাচ্ছি?
মিস্টার ক্রিসঃ আমরা হুয়াওয়ে ম্যাটবুকের টি সিরিজ ভার্সন ইনক্লুডিং টি১৪, টি১৫ আনতে যাচ্ছি বাংলাদেশের মার্কেটে। আর এগুলো মে মাসের বাজারে চলে আসবে।
রায়ান্সঃ আর এ ল্যাপটপগুলোর টার্গেটেড কাস্টমার কারা?
মিস্টার ক্রিসঃ আমরা এই ল্যাপটপগুলো মূলত স্টুডেন্ট ও ইয়াংদের টার্গেট করেই আনতে যাচ্ছি।
রায়ান্সঃ আর এই ল্যাপটপগুলোর স্পেশাল কোন বৈশিষ্ট্য যা বলতে চান।
মিস্টার ক্রিসঃ আমাদের এই ল্যাপটপগুলো অবশ্যই অন্যান্য ল্যাপটপ থেকে আলাদা হবে। আগেই আমি সুপার ডিভাইসের কথা বলেছি। এই ল্যাপটপগুলো সুপার ডিভাইস হিসেবে ফাংশন করবে। আপনি আপনার অন্যান্য ডিভাইসের সাথে খুব সহজেই একে কানেক্ট করতে পারবেন। এছাড়া এই সুপার ডিভাইস ল্যাপটপগুলোতে থাকছে মাল্টি স্ক্রিন কোলাবরেশন ও আরও আকর্ষণীয় বেশকিছু ফিচার।
রায়ান্সঃ এআই প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার চিন্তা কি? এটা কি সত্যিই আগামীকালের পৃথিবী বদলে দেবে?
মিস্টার ক্রিসঃ এটাও আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি বিশ্বাস করি দারুন এক পৃথিবী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আর এটা সম্ভব হবে এআই টেকনোলজির কল্যাণের। আপনারা অবশ্যই জানেন, চীনে ইতিমধ্যেই এআই টেকনোলোজির সাহায্য মানুষের জীবনযাত্রা অনেক বদলে গিয়েছে।
রায়ান্সঃ সবশেষে আবারও ধন্যবাদ এবং আমাদের শুভকামনা হুয়াওয়ে বাংলাদেশকে।
মিস্টার ক্রিসঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। রায়ান্সের জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা।
No Comments
Leave a comment