৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ওইয়ার্ড ম্যাগাজিনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেছেন অ্যাপলের বর্তমান সিইও টিম কুক। পাশাপাশি তিনি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা ও ভসিষ্যত নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন। রায়ান্স ব্লগের পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ বাংলায় তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: আপনি কখন উপলব্ধি করতে পারলেন যে জেনারেটিভ এআই খুব বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
টিম কুক: কোন সুনির্দিষ্ট মুহূর্তের কথা আমি বলব না। ব্যাপারটা অনেকটা তরঙ্গের মতন, কিংবা বলা যায় বজ্রপাতের মতন। ২০১৭ সালে আমাদের পণ্যের ভেতর আমরা নিউরাল ইঞ্জিন স্থাপন করেছিলাম। এটা বোঝাই যাচ্ছিল যে এআই এবং মেশিন লার্নিং বড় ব্যাপার হয়ে উঠছে। ব্যাপারটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। লোকজনকে আমাদের এই দিকে ধাবিত করতে হতো। আমাদের পণ্যের জন্য এটি নতুন যুগ।
প্রশ্ন: এ জিনিস দিয়ে আপনারা কি বানাবেন সেটা কিভাবে ঠিক করলেন?
টিম কুক: উদ্ভাবনগুলো আমরা এমনভাবে করতে চেয়েছিলাম যেন ব্যাপারটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং ব্যক্তিগত হয়। আমরা বিষয়গুলোকে এমনভাবে ব্যাবচ্ছেদ করার কথা ভাবতে থাকি যেন সেগুলো ক্লাসিক আপেল—কিভাবে আপনি এই প্রযুক্তিকে এমনভাবে মানুষের হাতে তুলে দিবেন যাতে করে তা তাদের কাজে লাগে এবং তাদের জীবনকে উন্নততর করে।
প্রশ্ন: আপনার প্রেজেনটেশনে আপনি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স কথাটিকে প্রায় এআই-এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আপনি কি মনে করেন মানুষ এআই’কে ভয় পায়?
টিম কুক: আমার মনে হয় ভয়টা আছে। আমরা বিভিন্ন নামের কথা ভেবেছি এবং শেষ পর্যন্ত অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বেছে নিয়েছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এটা কোন মজা করা নয়। আসলে এতে ব্যাপারটি বেশ সোজাসাপ্টা বোঝা যায়।
প্রশ্ন: কিছু কোম্পানি এআই ভিত্তিক সেবার জন্য মূল্য সংযোজন করে। আপনারা এ নিয়ে কিছু ভেবেছিলেন?
টিম কুক: আমরা এর জন্য মূল্য সংযোজন করার কথা ভাবিনি। আমরা বিষয়টিকে অনেকটা মাল্টিটাচ প্রযুক্তির মতোই দেখেছি যা কিনা আধুনিক ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছুদিন ধরে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে আসছেন। এর সবচাইতে সুবিধাজনক দিক কোনটি?
টিম কুক: আমরা একটি ই-মেইল ভিত্তিক কোম্পানি। প্রতিদিন বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারী, আমার অফিসের স্টাফ এবং পার্টনারদের কাছ থেকে প্রচুর ইমেইল আমি পেয়ে থাকি। সমস্ত ইমেইলের উত্তরগুলোর সারসংক্ষেপ গোছানো অবস্থায় পেয়ে যাওয়াটা একটা বড় সুবিধা, এবং গুরুত্ব অনুযায়ী বিষয়গুলো সাজানো অবস্থায় পেলে অনেক ক্লান্তিকর কাজ আর করতে হয় না। অবশ্যই ইমেজ প্লেগ্রাউন্ড-এর মতো মজার জিনিসও এখারে রয়েছে।
প্রশ্ন: আমি শুনেছি যে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স মানুষকে আরও মজার করে তুলতে পারে। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভূত মনে হয়।
টিম কুক: আমার মনেহয় এটি আপনাকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তুলতে পারে যা প্রকারান্তরে আপনাকে মজারই করে তুলবে।
প্রশ্ন: এআই যদি মানুষের জন্য কথা বলে তাহলে যোগাযোগের যে প্রকৃতি তার অধঃপতন ঘটে কিনা তা আমাকে ভাবায়। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স যদি কোন মজার কিছু লিখে তাহলে কে মজার হিসেবে আবির্ভূত হলো—প্রেরক নাকি এআই?
টিম কুক: সবকিছুর পরও এটা কিন্তু আপনার কাছ থেকেই আসছে। এটা আপনারই চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি এবং আমি, উভয়ই ব্যক্তিগত কম্পিউটারের আগমনের ফলে পাওয়া সুবিধাগুলো মনে রাখি। আপনাকে আর ক্যালকুলেটর চাপতে হয় না, আপনি কাজ করেন স্প্রিডশিটে। আপনি আর টাইপরাইটার ব্যবহার করেন না, আপনি ব্যবহার করেন ওয়ার্ড প্রসেসর। মিউজিশিয়ানদের সৃষ্টিকর্মে সহযোগিতা করছে লজিক প্রো, কিন্তু স্রষ্টা এখনো সেই মিউজিশিয়ানরাই।
প্রশ্ন: আপনাদের একটি ডেমোতে একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েট কাল্পনিক চাকরিপ্রার্থীকে দেখলাম। তার কভার লেটার ছিল খুবই সাদামাটা কথ্য ভাষায় লেখা, অনেকটাই অপরিপক্কতা পূর্ণ। অ্যপল ইন্টেলিজেন্স-এর মাধ্যমে একটা মাত্র ক্লিকেই পুরোটা পালটে গিয়ে এমন এক চমৎকার লেখা দাঁড়িয়ে গেল যেন তা খুবই স্মার্ট কেউ লিখেছে। আমি যদি এই লোকের নিয়োগকর্তা হতাম তাহলে হয়তো নিজেকে প্রতারিত মনে করতাম, কারণ সেই কাভার লেটারটি লেখার মতো পেশাদারিত্ব তার নেই।
টিম কুক: আমার এমনটা মনে হয় না। এই টুল ব্যবহার করার মাধ্যমে এটি আরেকটু মার্জিত হয়েছে। টুল ব্যবহার করবেন কিনা সেটি এখনো আপনারই সিদ্ধান্ত। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে আমি আর আপনি কোন একটি ব্যাপারে সহযোগিত করছি—এক যোগ এক সমান দুই-এর চাইতে বেশি কিছু, তাই না?
প্রশ্ন: ধারণা করছি এর বিরুদ্ধে যুক্তিটা অনেকটা ইন্টারনেটের প্রাথমিক যুগে সার্চ করা নিয়ে অভিযোগের মতোই। কেউ আর তারিখ মুখস্ত করবে না: “কারণ আমার তা করার প্রয়োজন নেই। আমার হাতে সার্চ ইঞ্জিন আছে!” সুতরাং কাউকে আর ইতিহাস পড়তে হবে না—আর এখন ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এমন যে পেশাদার দরখাস্ত কিভাবে লিখতে হয় তা জানারও দরকার নেই।
টিম কুক: এই বিষয়গুলো বেশ ক’বছর ধরেই আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমার মনে আছে মানুষ ভাবত ক্যালকুলেটরের কারণে মানুষের গাণিতিক দক্ষতা হারিয়ে যাবে। আসলেই কি তা হয়েছিল, নাকি এর ফলে মানুষের দক্ষতা বেড়েছিল?
প্রশ্ন: কিভাবে বড় বড় ভাগ অংক করতে হয় তা আমি জানতাম। এখন আর জানি না।
টিম কুক: আমি কিন্তু ভুলিনি।
প্রশ্ন: এটি আপনার কৃতিত্ব। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর অন্য যে বিষয়টি আমাকে হতভম্ব করে দেয় তা হলো আপনাদের কাছে আমাদের সম্পর্কে ইতিমধ্যেই অনেক তথ্য রয়েছে, যা আপনারা আমাদের ইমেইল, ক্যালেন্ডার এবং অন্যান্য অ্যাপল প্রোডাক্ট থেকে পেয়ে থাকেন।.অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’কে কার্যকর করতে আপনারা এই সমস্ত তথ্যকে একত্রিত করেন। যার কারণে প্রাইভেসি সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। খুব বেশি কোম্পানি এমনটা করতে পারে না কারণ তাদের অ্যাপলের মতো ইকোসিস্টেম নেই।
টিম কুক: আমরা এটিকে ইকোসিস্টেমের মূল্য হিসেবে দেখি না। মানুষকে সহযোগিতা করতে এবং তাদের জীবনকে সহজ করতেই এটি কাজ করে। এবং স্পষ্টতই এটি তা করে।
প্রশ্ন: অন্য কোম্পানির এআই সিস্টেমের মধ্যে তাদের মেইল এবং ম্যাসেজ কি আপনি অ্যাপল এপসের মতো করেই ব্যবহার করবেন? সেক্ষেত্রে প্রাইভেসি নিয়ে আপনার ভাবনা কি হবে?
টিম কুক: আমরা সবসময় প্রাইভেসির বিষয়টি বিবেচনা করব। ভাল প্রাইভেসি এবং ভাল ইন্টেলিজেন্স-এর মধ্যে ব্যালেন্স করার কোন চিন্তা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের বেশিরভাগই ডিভাইসের মধ্যে চালিত হয়, তবে কিছু ব্যবহারকারীর জন্য আমাদের আরও শক্তিশালী মডেল দরকার। তাই আমরা প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট-এর ব্যবস্থা করেছি যেখানে ডিভাইসের মতোই নিরাপত্তা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সঠিক ধারণাটা পেয়েছি ততক্ষণ আমরা এ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি।
No Comments
Leave a comment